তামাশা চলে হেলমেট নিয়ে, চোখে দেখে মানদন্ড দেয় বিআরটিএ

বছরে মারা যায় ১১শ মানুষঃ বিআরটিএ অদক্ষতায় মোটরসাইকেলের চালক সংকট

Passenger Voice    |    ০৪:২২ পিএম, ২০২১-০২-০৬


বছরে মারা যায় ১১শ মানুষঃ বিআরটিএ অদক্ষতায় মোটরসাইকেলের চালক সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ দেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা ৩১ লাখ ২৫ হাজার। তবে বৈধ চালক আছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার। ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ মোটর সাইকেল চালকরা দুর্ঘটনা বেশি ঘটায়। বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল চালকের  ড্রাইভিং লাইসেন্স  না থাকার জন্য নিয়ন্ত্রণ  কর্তৃপক্ষের নজরদারির  দূর্বলতা, প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা আর দুর্নীতিকে দায়ী করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।  

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, দেশের পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হচ্ছে বিআরটিএ। কিন্তু বাস্তবে বিআরটিএ কতটুকু কাজ করছে? গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে বিআরটিএতে লাইসেন্স গ্রহনের সময় সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তি বেশি। এই প্রক্রিয়াটিকে এত জটিল আর দুর্নীতিতে পূর্ণ করে রাখা হয়েছে যে চালকরা লাইসেন্স করাতে আগ্রহী হয়না। এমনকি আগ্রহী হলেও ভোগান্তির কারনে সিদ্ধান বদলে নিচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে বিআরটিএতে বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরী। 

অন্যদিকে নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বাড়ছেঃ

বুয়েট, পুলিশ, বিএসটিআই ও বিআরটিএর সূত্র বলছে ২০১৬ সালে ২৮৮ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত হয়েছে। ২০১৮ সালে ৮৪৪ টি দুর্ঘটনায় ৯৫৩ জন নিহত হয়েছে, এছাড়া ২০২০ সালে ১০০৮ টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১১০০ জন নিহত হয়। 

তবে এ সংখ্যাটি আরো কয়েক গুণ বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের যুক্তি, মোটর সাইকেলের সংখ্যা দিয়ে এর চালকের সংখ্যা নিরূপণ করা যায় না। কারণ পরিবারে  যদি একটি মোটরসাইকেল থাকে, তাহলে সেটি কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরাও ব্যবহার করেন। এমনও দেখা যায়, পরিবারে মোটর সাইকেল একটি, কিন্তু সেটি চালান অন্তত পাঁচজন। কাজেই মোটর সাইকেলের সংখ্যার চেয়ে বাহনটির  চালকের সংখ্যা  কয়েক গুণ  বেশি বলে মনে করেন  তারা। বিপুল সংখ্যক  চালকের  প্রয়োজনীয় দক্ষতা,  ট্রাফিক আইন  সম্পর্কে  সম্যক  ধারণা ও সচেতনতা না থাকায় দেশে মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

তবে এইসব দুর্ঘটনার জন্য বেশ কয়েকটি কারনও বলছে বিশ্লেষকরা। অথচ রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান গুলো দিচ্ছে নিম্নমানের হেলমেট। অন্যদিকে চোখে দেখে হেলমেটের মান নির্ধারণ করছে বিআরটিএ। মান পরীক্ষায়ও বিএসটিআই এর কোন ল্যাব নেই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেরও নেই কোন সুর্নিদিষ্ট নীতিমালা। উন্নতমানের হেলমেট পরিধান করে মোটর সাইকেল চালায় ২ থেকে ৫ শতাংশ চালক। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান চালালে রয়েছে জেল-জরিমানার বিধান। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে এ শাস্তি আরো কঠোর হয়েছে। তার পরও কমেনি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যান চালানোর প্রবণতা। আর চলাচলকারী যানের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রেই আইন অমান্যের এ প্রবণতা তুলনামূলক বেশি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বক্তব্য সড়কে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনসহ অনিয়ম-বিশৃঙ্খলায় সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকে মোটরসাইকেল । গত ১ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির ট্রাফিক আইনে করা মামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেদিন ট্রাফিক আইনে মোট মামলা হয় ৭৪৬টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেলে মামলার সংখ্যাই ৫৪২। মোটরসাইকেল মামলার বড় অংশই চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার অপরাধে দায়ের করার কথা জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা।